গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল

 

আমাদের সমাজে যেমন নেতার অভাব নেই,তেমনি কারি ব্যবসায়ও নেতা এবং সংগঠন গুনতে কালকুলেটর লাগবে। আলাপচারিতায় দেখা গেছে এইসব ভূইফোর নেতা ও সংগঠনগুলোর প্রতি সাধারণ রেষ্টুরেটার্সদের মনোভাব অনেকটা ‘গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল’ এর মতো। এদের কোন গণভিত্তি নেই তা বুঝা যায় যখন সরাসরি বিলেতের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে থাকা রেষ্টুরেন্টগুলো সরাসরি ভিজিট করি এবং মালিক ও স্টাফদের সাথে আলাপ করার সুযোগ হয়। কারি লাইফ মিডিয়া গ্রুপের টিম নিয়মিত শত শত রেষ্টুরেন্ট ভিজিট করে কম হলেও বছরে দুবার। এর দুটো কারণ, ডাটাবেইসকে শক্তিশালী ও অথেনটিক করা এবং অন্যটি মানুষের কনসার্ণ শোনা এবং গ্রুপের বিভিন্ন প্রকাশনায় তা প্রতিফিলতি করা। এ ভাবেই সারাদেশের রেষ্টুরেটার্সদের সাথে কানেক্ট করে ম্যাগাজিনটি পাঠকদের কাছে সঠিক অভিমত তুলে ধরতে পারছে। আমাদের মোট্টো হলো মানুষের কাছে যাওয়া মানুষ আমাদের কাছে আসা নয়। আর এটাই লেখার অনুপ্রেরণা যোগায়।
কিছু সংখ্যক নেতানেত্রী এবং সংগঠনকে সাধারন রেষ্টুরেন্ট ব্যবসায়ীরা দেখেন টিভি চ্যানেলে বাক্সবন্দী, ফেসবুক, হোয়াটস আপ এবং কখনো কখনো বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানাদিতে ফ্রি দাওয়াত খাওয়া নেতা ও সংগঠক হিসাবে। মন্ত্রী সান্ত্রীর সাথে ছবি তোলার কথা বাদই দেয়া যাক। ফেসবুকে ছবি পোষ্ট করে বুঝাতে চান তার সকল সমস্যার ব্যাপারে উপদেশ দিয়ে এসেছেন মন্ত্রীকে। আর বর্তমান পান্ডেমিকও নিয়ে এসেছে ঝুমাঝুমি। অর্থাৎ ঝুম এর বদৌলতে ঘরে বসেই ভাষণ দেয়া যায়।
তবে আগে থেকেই একটা কথা পরিষ্কার করা দরকার এতো ভূইফোর তথাকথিত সংগঠনের পাশাপাশি সৌগরবে দীর্ঘ ৬০ বছরেরও পুরানো কারি হাউসকে সেবাদান কারি ভালো সংগঠনও রয়েছে। তারা নিরলস ভাবে আমাদের কারি হাউসগুলোর জন্য কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের পূর্বপুরুষরা এই সংগঠন গড়ে তুলে অনেক আগে থেকে কারি ব্যবসায়ীদের একত্রিত করার চেষ্টা করেছেন, তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা। তারা আগে থেকে এটা না করে গেলে সংগঠিত ভয়েস নিয়ে কেউ সামনে এগিয়ে যেতে পারতনা।
তবে বাঙালি কমিউনিটিতে এত সংগঠন, এত স্বঘোষিত নেতা, এত বিভাজনের মূল কারণটি কি?
ঐতিহ্যবাহি বড় ও পুরানো সংগঠনে যারা পজিশন করতে পারেননা অথবা বেশী উচ্চাভিলাসীরা বেরিয়ে গিয়েই আরো একটি সংগঠন গড়ে তোলেন। কিন্তু বেশী দূর এগিয়ে যেতে পারেন না। অহংবোধ, ‘আমি বেশি জানি’ মনোভাব ও ঠেলাঠেলিতেই তাদের পরিণতি হয় ‘গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়ল’ হিসাবে।
যেকোন ভাবে তারা নেতা হিসাবে টেলিভিশন এবং মিডিয়াতে নিজের চেহারা দেখাতে ব্যস্ত। এদের দৌরাত্ম মূলত বাংলা মিডিয়া পর্যন্ত। কখনো কখনো যদি কোন দৈবাত কারণে মূল ধারার মিডিয়াতে পৌছানো যায়, তাহলে তো আর যন্ত্রণার সীমা নেই!
ইদানিং আরো উপদ্রব বেড়েছে কার কোন মন্ত্রীর সাথে বেশী খাতির ও পরিচয় এবং এটার জন্য মতাদর্শ, দল, দেশ ও জাতি বিক্রি করতেও কোন কোন নেতার দ্বিধা নেই। শুধু একটি ছবির জন্য ….
ইংরেজীতে ব্রান্ড এম্বাসাডর বলে একটি কথা আছে। সেটারও প্রচুর ব্যবহার দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন সংগঠনে এবং তাদের কিছু নেতৃবৃন্দের নামের টাইটেলের পিছনে। সংগঠনের সদস্যরা সবাই এই ব্রান্ডের প্রডাক্ট ব্যবহার করছেন অথবা সেবা গ্রহণ করছেন কিম্বা খোদ এম্বাসাডর সেটা ব্যবহার করেন কিনা এ নিয়ে অনেকের সন্দেহ রয়েছে। ব্রান্ড এম্বাসাডর হিসাবে যে কোম্পানীর মাল তারা প্রমোট করছেন, বা অন্যকে সেটি ব্যবহারের উপদেশ দিচ্ছেন, তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গেলে দেখা যায় ব্যবহার করছেন অন্য কোম্পানীর মালামাল।
কিছু নেতৃবৃন্দ রয়েছেন কোন কোন কোম্পানীর ব্যাপক সমালোচনা করেন, এর বিরুদ্ধে প্রচারণা চালান, কোম্পানীর সেবার সমালোচনায় টিভি পত্রপত্রিকায় ঝড় তুলেন, সাধারণ রেষ্টুরেটার্সদের জ্ঞান দেন, অথচ তাদের রেষ্টুরেন্টে বা টেকওয়েতে এই কোম্পানীর প্রডাক্ট ও সার্ভিস নিয়েই হরদম ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। টিভি প্রেজেন্টারদের উচিত তাদের প্রশ্ন করা, কেন এই ডাবল স্ট্যন্ডার্ড?
কথায় ও কাজে মিল থাকা কি বাঞ্চনীয় নয় সেসব নেতাদের? ইংরেজীতে একটি কথা আছে ‘চ্যারিটি বিগিনস এট হোম’। একজন রেষ্টুরেটার্স বললেন, ভাইসাব বয়ান শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা। ফেইসবুকের পোষ্টিং দেখলে মনে হবে সবকিছুর সমাধান করে দিচ্ছেন। আবার যাদের বিরুদ্ধে কথা বলেন তাদের সাথে লাইনও মারেন। বাংলাদেশে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় নেতানেত্রীদের নিয়ে একটা কথা চালু ছিল – ‘দিনে রাজপথ আর রাতে বঙ্গভবন’।
অবস্থাটা এমন আমাদের কারি হউসের কিছু নেতা আছেন, বাংলাদেশের অনেক নেতানেত্রীর মতো সারা দেশে হরতালের ডাক দিয়ে রাস্তায় পিকেটিং না করে ঘরে বসে হিন্দি সিনেমা দেখে দিন কাটান!

হায়রে বিলেতে বাংলাদেশি রাজনীতি!

কি বিচিত্র আমাদের এই পৃথিবী। এক করোনা ভাইরাস সব কিছু ওলট পালট করে দিয়েছে। ব্যক্তিগত ভাবে বাংলাদেশের দলীয় রাজনীতি দেশের বাইরে চর্চা করার বিপক্ষে। কিন্তু বাংলাদেশের গণতন্ত্র এবং দুর্যোগে দুর্দিনে আমরা প্রবাসীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে পাশে দাড়ানো এবং একটি প্রেশার গ্রুপ হিসাবে কাজ করার পক্ষে।
বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে লন্ডনে বসে লেখার ইচ্ছা নয়। কিন্তু এই করোনা কালে কিছু খাপছাড়া অভিনব ঘটনা নজরে এসেছে এবং নিশ্চয়ই পাঠকদেরও নজরে এসেছে। যদি কেউ এই ঘটনার যৌক্তিকতা সম্পকের্ সমাধান দিতে পারেন, তাই এই লেখার অবতারনা।
করোনা কালে যে ভাবেই হোক বাংলাদেশের একজন বয়োবৃদ্ধ রাজনীতিবিদ এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদাকে তার সাজা স্থগিত করে কারাগার থেকে মুক্তি দেয়া হয়েছে, এটাকে স্বাগত জানাই। এটা খুবই মানবিক ব্যাপার এবং এর জন্য সরকার ও প্রশাসন ধন্যবাদ পাবার যোগ্য। বাংলাদেশের রাজনীতি, গণতান্ত্রিক আন্দোলন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দেশ সেবায় বেগম জিয়ার অবদান অনেক।
আগেই বলেছি করোনা কালে নানা বিষয়ের হিসাব নিকাশ মেলানো খুবই কঠিন এবং সত্যি অনেকটা গোলক ধাঁধার মতো।
এই যেমন ধরুন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট তারেক রহমান লন্ডনে বসে তার নেতা কর্মিদের নাকি নির্দেশ দিয়েছেন তারা যাতে এখানকার এনএইচএস গুলোতে ষ্টাফদের জন্য খাবার দেবার জন্য। তাই তার নির্দেশে অসংখ্য নেতা কর্মি টেলিভিশনের ক্যামেরার সামনে এবং ভালো ভাবে বাংলা মিডিয়ায় প্রচার কার্যের জন্য এই খাবার ডেলিভারীর খবর ও ছবি দিতে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। এটা দেখলেই বুজা যায় এনএইচএস এর প্রতি দরদ দেখানোর চেয়ে এটার প্রচার কার্যের টার্গেট হচ্ছে তাদের ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টকে দেখানো।
যারা বিএনপি করেন এবং স্বয়ং তারেক রহমানও নিশ্চয়ই জানেন এই করোনাকালে বাংলাদেশে কোটি মানুষ অসহায় অবস্থায় না খেয়ে খুবই কষ্টে দিনকাল কাটাচ্ছেন। তিনি কেন তার বৃটেনে বসবাসরত এত উদ্যোমী উৎসাহী নেতা কর্মীদের দেশের মানুষের পাশে এই দু:সময়ে দাড়াতে বললেন না? অবশ্যই এনএইচ এস এর পাশে দাড়ানো একটি ভালো কাজ, কিন্তু এনএইচএস এদেশের সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত এবং এদেশের সরকার বাংলাদেশের মতো গরীব নয় কিংবা আগোছালো নয়।
এদেশে থাকার সুবাদে জনাব তারেক রহমান ও তার নেতাকর্মীরাও নিশ্চয়ই জানেন, বাংলাদেশের মতো এদেশে কারো না খেয়ে মারা যাবার সুযোগ কম। এদেশের সরকার যে কত দয়ালু তার চেয়ে বেশী আর কারো জানার কথা নয়। জনাব তারেক রহমানের উপর বাংলাদেশে একাধিক মামলার পরেও এবং তিনি একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামী হওয়া সত্ত্বেও কিন্তু তাকে ব্রিটিশ সরকার আশ্রয় দিয়েছে।
আমার প্রশ্নটা হলো বর্তমান পরিস্থিতিতে তিনি তার নেতাকর্মীদের বাংলাদেশের মানুষের বিপদে পাশে দাড়াতে বলেছেন কি? এতে নিশ্চয়ই তিনি রাজনৈতিক ভাবে লাভবান হবেন এবং বাংলাদেশের মানুষরাও এটাকে স্বাগত জানাবে। তাহলে প্রশ্ন জাগে গুজবটা কি সত্যি যে তিনি ব্রিটিশ নাগরিকত্ব নিয়েছেন? আর এই দায়বোধ থেকে নেতাকর্মীদের এনএইচএস কে খাবার দেবার নির্দেশ দিয়েছেন।
উল্লেখ্য যে, এই করোনাকালে বৃটেনের বহু সামাজিক সংগঠন বিলেত থেকে ত্রাণ ও অর্থসংগ্রহ করে করোনার ঝুঁকি নিয়েও বাংলাদেশের অসহায় মানুষের পাশে গিয়ে দাড়িয়েছে।

আমিও নাই দিদিও নাই
কেমন মজা হবে!

করোনা ভাইরাস কাউকে করুণা করেনি, করবে বলে মনেও হয়না। পাব, বার, রেষ্টুরেন্ট, হোটেল ব্যবসা, বলতে গেলে পুরো হসপিট্যালিটি জগতে বিরাট ধ্বস নেমেছে। কবে যে অবস্থা স্বাভাবিক হবে কেউ জানেনা।
আমাদের কারি হাউসগুলোকে সে হিসাবে ক্ষুদ্র ব্যবসা বলে গণ্য করা হয়। এই কারি ব্যবসায়ও রয়েছে নানা বিভাজন এবং হিসাব নিকাশ। আমরা সবাই জানি মূলত ব্রিটিশ কারি হাউস বা বেশির ভাগ উপ মহাদেশীয় খাবারের রেষ্টুরেন্ট টেকওয়েগুলোর অধিকাংশই বাংলাদেশীদের দ্বারা পরিচালিত। আমাদের সামনে এই করোনা ভাইরাসের ব্যবসায়িক বিপর্যয় এবং নানা প্রতিকূলতা আছে, এব্যাপারে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই।
মজার ব্যাপার হলো, আমাদের বাংলাদেশি কারি হাউস নিয়ে যারা নাক সিটকাতেন এবং হাসি তামাশা করতেন তাদের আরো বিশাল বিপর্যয়। তথাকথিত অথেনটিক ইন্ডিয়ান বলে পরিচিত রেষ্টুরেন্টগুলোর অবস্থা দেখে অনেকেইে করুণার চোখে দেখছেন এখন। বেচারাদের অতি মহার্ঘ ‘পাওয়া ভাজি’ আর চানাচুরের চাট টেকওয়ে নিতে কাস্টমারদের আগ্রহ নেই।
একজন বিশিষ্ট বাংলাদেশি ব্যবসায়ি বলেন, ‘যারা আমাদের ‘কারি হাউস’ নিয়ে ঠাট্টা করেছে তাদের অবস্থা দেখেছেন? সেই সব মিশেলিন স্টার শেফ এবং নাক উচু ভারতীয় রেষ্টুরেন্ট মালিকরা উড়ে এসে জুড়ে বসে আমাদের ব্যবসার সা¤্রাজ্য দখল করতে চেয়েছিলেন। ’
‘তাদের অনেকে মনে করেছেন কারি ব্যবসাটা হচ্ছে বলিউডের ফিল্মের মতো। এই ব্যবসার চর দখল তারা অতি সহজে ফিল্মী কায়দায় ডিসুম ঢুসুম করে দখল করে বাজার মাত করবেন। বাস্তবে হয়েছে অন্যরকম। এখানেও যে ঢালিউডের সালমান খান আর ডিপজলরা অনেকে আগে থেকেই বাজার দখল করে আছে একথা তারা কল্পনাও করতে পারেননি। তাই ঢাকাইয়্যা ডিপজলরা এখন আমাদের বোম্বে থেকে আগত অতিথিদের গভীর জলে ফেলে দিয়েছে।”
‘সেই সম্মানিত দাদা ও দিদিরা এখন টেকওয়ে বিক্রি করছেন, শুধু তাই নয় ডেলিভারীও দিচ্ছেন। উবার, জাস্ট ইষ্ট, ডেলিভারুসহ সব প্রতিষ্ঠানের কাছে তাদেরকে আত্ম সমর্পণ করতে হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘এই পান্ডেমিক কালে তারা বুঝতে পারছেন বাঁচার আর উপায় নেই। বাংলাদেশীদের ব্যবসার মডেল এখন ফলো করতে হবে। চিকেন টিক্কা মাসালা, চিকেন মাদ্রাজ আর মিট ভুনাও বিক্রি করতে হচ্ছে।
বাংলাদেশী ব্যবসায়ী কারি শেফ ম্যাগাজিনকে বলেন, ‘দেখুন আমি খুব ছোট একটি রেষ্টুরেন্ট নিয়ে গত ৫০ বছর ধরে লন্ডনে ব্যবসা করছি, কিন্তু হঠাৎ এক দিদি ভারত থেকে এসে এমন ভাব দেখালেন যেন তিনিই সারা দুনিয়ায় একমাত্র বাঙালী মহিলা শেফ, এখানে আর কেউ নেই। মোটা অংকের টাকা ছড়িয়ে পাবলিক রিলেশন্স ক্যাম্পেইন শুরু করলেন এবং ক্রেতাদের বুঝাতে শুরু করলেন তার খাবারই আসল আর আমরা সব নকল। তিনি আদৌ কোন পেশাদার শেফ কিনা এনিয়েও আমার সন্দেহ আছে!
তিনি আরো বলেন, ‘গলার সুর এখন পাল্টে গেছে। করোনা ভাইরাস কাউকে করুণা করেনা। ইনশাল্লাহ আমরা ভাল টেকওয়ে ব্যবসা করছি। আর যদি না পারি আমিও থাকবোনা দিদিও থাকবে না। তাই বলছিলাম মনে পড়ে ছোটবেলার পড়া সেই কবিতার কথা ’আমিও নাই দিদিও নাই কেমন মজা হবে।’ ‘অবশ্য আমি চাইনা আমাদের কারুর এরকম পরিণতি হোক। এই করোনা যদি শেষ পর্যন্ত এই উপলব্দিটা নিয়ে আসে কাউকে নাট সিটকানো ঠিক না।

গরু মেরে জুতা দান!

করোনা ভাইরাসের কারণে বিভিন্ন পরিসংখ্যান দেখা গেছে, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর আঘাতটা খুব বড় করে এসেছে। অথচ এই সরকার শুরু থেকে এটা অনেকটা জেনেও না জানার ভান করে আসছিলো। এখন গোপন তথ্য ফাঁস হবার পর তদন্ত কমিটির নামে টালবাহানা কিছুদিন ধরে চলছে।
পরিসংখ্যানের মধ্যে একটি ভয়াবহ তথ্য আছে, যা হলো বাংলাদেশীদের নিয়ে। এটা স্বভাবতই আমাদের খুব উদ্বেগের কারন। ফ্রণ্টলাইনে কাজ করতে গিয়ে বংলাদেশী ডাক্তার, নার্স ও কেয়ার ওয়ার্কার ও মারা গেছেন। তাছাড়া এখনো অনেক জীবনের ঝুকি নিয়ে কাজ পাবলিক ট্রান্সপোর্ট থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গায় করে যাচ্ছেন।
এসব ঘটনার সুষ্টু তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়ার পরিবর্তে সরকার এখন তাদের দলীয় কিছু সমর্থকদের মাঠে নামিয়েছে। এরা ক্যাম্পেইন করছেন আমাদের আরও সম্মাননা পাওয়া উচিত। এমবিই, ওবিই কিভাবে পাওয়া যায় সহজে ইত্যাদি। একেবারে গরু মেরে জুতাদানের মতোই আরকি। অথচ দেখুন না মৃত্যুর ঝুকি বেশি থাকা সত্বেও সমাধানের উপদেশ গুলো তদন্ত রিপোর্টে স্থান পায়নি।
অথচ দেখুন আমাদের বাংলাদেশীরা মূলত কারি ব্যবসার সাথে জড়িত, কিন্তু সরকার বাংলাদেশীরা এই করোনা ভাইরাসে বেশী ঝুকির সম্মুখীন এই নিয়ে অনেক আগে থেকেই সচেতনতা ক্যাম্পেইন শুরু করতে পারতো, কিন্তু তা করেনি। কিছু কিছু বাংলা মিডিয়ায় ইংরেজী ভাষায় ঝঞঅণ অখঊজঞ! বললেই কি আমাদের কমিউনিটি সচেতন এবং সাবধান হয়ে যায়?
এরা কিন্তু এটাও জানে এখানে বাংলাদেশ ক্যাটারার্স এসাসিয়েশন নামক একটি ৬০ বছরের পুরানো সংগঠন আছে, আছে ১৭ বছরের পুরানো বাংলাদেশী রেষ্টুরেন্ট ব্যবসার অনেক পুরানো ম্যাগাজিন কিন্তু এরা আমাদের নেটওয়ার্কগুলো কাজে লাগাতে চায়নি। ব্যাপারটা হলো নিয়তের উপর কাজের ফলাফল নির্ভর করে।
সরকারের হঠাৎ করে সম্মাননা দেয়ার মায়াকান্না কেন। এটাতো অপেন সিক্রেট ব্এিমই কমউনিটির মানুষ মরেছেন বেশি, বাংলাদেশিদের মৃত্যু ঝুকি বেশি আর এটার কারণ চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে আমাদের ঘাড়ে। আমাদের অন্যান্য রোগ আছে তাই তা হচ্ছে। রোগের কারণ কি এবং এর সমাধান সম্পর্কে পরামর্শ সরকারি রিপোর্টে স্থান পায়নি বলে মিডয়ায় ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে। ব্ল্যাক লাইভ ম্যাটারর্স ক্যাম্পেইনে আরও আগুণ জ্বলে উঠতে পারে বলে ধামা চাপা এটাও মিডিয়ার খবর।
বর্তমান সরকারের জাতীয়ভাবে অর্থনীতি চাঙ্গা করার কিছু কাজ প্রশংসিত হয়েছে এতে দ্বিধা নেই। কিন্তু টার্গেটেড ভাবে যে কমিউনিটিগুলো সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগি তাদের জন্য কি করা হচ্ছে সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। বাঙালিরা জোক করে কারি মন্ত্রী, কারি মন্ত্রী বলে একজনকে শেষ পর্যন্ত মন্ত্রীই বানিয়ে দিয়েছেন। সরি, বরিস জনসন বানিয়েছেন । পল স্কালী এমপি কারি লাইফসহ কারি ব্যবসার অনেক অনুষ্ঠানে গেছেন। রেষ্টুরেন্ট টেকওয়ে খোলা হয়েছে। বাংলাদেশি রেষ্টুরেন্ট মহলে এখন আতংক বিরাজ করছে। আমাদের কারি ইন্ডাষ্ট্রির ১২ হাজার রেষ্টুরেন্ট ও টেকওয়ে ব্যবসায়ীদের সামনে এখন বিশাল সমস্যা কি ভাবে তারা সামনে এগোবেন? এব্যাপারে শুধু ইংরেজীতে ওয়েবসাইটে দায়সারা গোছের গাইডেন্স প্রকাশ করেই সরকারের কাজ হয়ে গেছে। অথচ সরকার চাইলে একযোগে কাজ করতে পারতো আমাদের কারি হাউসগুলার প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন ও মিডিয়ার সাথে। পল স্কালী এমপির কাছে আমরা এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে সুনির্দিষ্টভাবে কারি ইন্ডাষ্ট্রিতে বার্তা পৌছানোর জন্য টারগেটেড ক্যাম্পেইনের জন্য চিঠি লিখেছি। আমরা এখনো এর সুনির্দিষ্ট জবাবের অপেক্ষায় আছি! সরকারদলীয় বাঙালী ভাইরা কি এসব তাদের মন্ত্রী ও এমপিদের কানে তুলতে পারবেন? নাকি তাদের কথা এরা শুনেন না?
যারা এই খেতাব দেয়ার লোক খুঁজছেন তাদের উদ্দেশ্যে বলবো আমাদের বাংলাদেশের জাতী য় কবি কাজী নজরুল ইসলামের একটা বিখ্যাত কবিতার লাইন। তিনি কিন্তু এসব খেতাব বা পদকের ধান্ধায় ঘুরতেন না, বরং তিনি উচ্চস্বরে বলতেন, ‘লে হালুয়া আর দে গরুর গা ধুইয়ে দে।’

Share it in social media


আরও খবর