প্রবাসীর নামে প্রতিষ্ঠিত ব্যাংকগুলোর নানা প্রতিশ্রুতির কি হলো?

 

শত শত কোটি টাকা লুটপাট!
সাম্প্রতিক কালের বাংলাদেশে সবচেয়ে ভালো ব্যবসা হলো প্রবাসী কিংবা যাদের এনআরবি অর্থাৎ নন রেসিডেন্ট বাংলাদেশী বলা হয় তাদের নিয়ে। এর চেয়ে উত্তম ব্যবসায়িক লাভজনক মাধ্যম ও সূত্র বোধহয় সত্যিকার ভাবে আর নেই।
আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কথা বাদই দিলাম। তিনি নিজে দীর্ঘদিন প্রবাস জীবন-যাপন করেও প্রবাসীদের অপমান করতে একটু ভাবেন নি! প্রথমে প্রবাসীদের করোনা কালে দেশে ফিরতে বাধা এবং পরে এমনও মন্তব্য করেছেন, প্রবাসীরা দেশে আসলে নবাবজাদা হয়ে যান। যদিও দেশটার অর্থনীতির চাকাতে প্রবাসীদের বিরাট ভূমিকা আছে কিন্তু নেতানেত্রীরা সুযোগ পেলে প্রবাসীদের তুচ্ছ তাচ্ছিল্ল্য করতে ভুলেননা।
প্রবাসীদের নাম ভাংগিয়ে ব্যবসা বাণিজ্যের নামে যে যাচ্ছেতাই চলছে, তা নিয়ে রীতিমত সিরিজ নিবন্ধ লেখা যায়। ভবিষ্যতে আশা করছি একটা একটা করে পাঠকদের কাছে তা তুলে ধরার। কিন্তু এসব লেখায় কোন কাজ হবে কিনা জানিনা, তবু প্রবাসী ভাইদের মনের কথা অন্তত শেয়ার করার ইচ্ছা পোষণ করি।
প্রথমত আমাদের নাম বিক্রি করে দেশে কতোটা প্রবাসী ব্যাংক হয়ে গেলো, সেটা কি আপনারা লক্ষ্য করেছেন? এদের কাজটা কী এবং প্রবাসীরা এর থেকে কি সেবা পাচ্ছেন, কেউ কি খুলে বলতে পারেন? আমরা দেখি আমাদের নাম বিক্রি করে অনুমোদন প্রাপ্ত প্রবাসী ব্যাংকের ডিরেক্টর শেয়ার হোল্ডাররা কে চেয়ারম্যান হবেন, কে নেতৃত্ব দিবেন তা নিয়ে অন্তর্দ্বন্ধে লিপ্ত যা আর গুঞ্জনে সীমাবদ্ধ নেই। আবার কোন কোন ব্যাংকের সাথে সংশ্লিষ্টরা অথবা ব্যাংক থেকে সুবিধা নিয়েছেন এমন ব্যক্তিরা শুধু তাই নয় অপরাধ জগতের সাথে এমন কি মানব পাচারের মতো ঘৃণ্য কাজের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। এমপি শহীদ ইসলাম পাপুল, রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহেদ করিমের নামও এসেছে তালিকায়। বাংলাদেশে ঋণ খেলাপি হয়ে ব্যাংকের মালিক হওয়া অথবা ব্যাংকের মালিক হয়ে ঋণ খেলাপি হওয়া বা অবৈধ ভাবে ঋণ দেয়াতো খুবই সাধারণ ঘটনা।
অনেকগুলো প্রবাসী ব্যাংক হয়েছে, কিন্তু কজন প্রবাসীর এসব ব্যাংকে একাউন্ট আছে? কেউ কখনো এসব ব্যাংকে একাউন্ট খোলার চেষ্টা করেছেন? প্রবাসীদের নামে এসব ব্যাংক করার আগে এসব ব্যাংকের উদ্যোক্তারা নানা বিশেষায়িত সেবা দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এবং এসব অনেক কিছু তাদের ওয়েবসাইটে দেখাও যায়। লন্ডন আমেরিকায় বসে আপনারা এই সেবা পাবেন ওই সেবা পাবেন কতকিছু। কিন্তু সেবা তো দুরের কথা, ব্যাংকের কোন প্রতিনিধি বা অফিসতো কেউ দেখেইনি খোলার আগে যে হম্বিতম্বি ছিল তাও আর নেই। বরং বিভিন্ন ব্যাংক সম্পর্কিত নেতিবাচক খবরাখবর দেশের পত্রপত্রিকায় এসেছে। আর ব্যাংক খুব লাভজনক ভেবে কিছু প্রবাসি ব্যবসায়ি যারা বিনিয়োগ করেছিলেন তাদের অনেকের অসন্তোষ নিয়ে গসিপেরও ঘাটতি নেই। আসেন সাধারণ প্রবাসির কথা, বাস্তবে এসব ব্যাংকে একটা সাধারণ একাউন্ট খুলতে কি পরিমান কসরত করতে হয়, তা একবার ভেবে দেখেছেন?
এসব ব্যাংক করার আগে প্রতিশ্রুতি শুনেছিলাম তিন বছরের মধ্যে শেয়ার বাজারে ব্যাংক নিয়ে আসবেন। কিন্তু কোথায়? কে মানে কার নিয়ম? শেয়ার বাজারে আসলে আবার নিয়ম আছে যে ৩০% কোটা প্রবাসীদের জন্য রাখতে হবে। আসলে প্রবাসী ব্যাংক গুলোর ক্ষেত্রে এটা শতকরা ৯০ ভাগ করা উচিত।
যারা এসব ব্যাংক করেছেন এদের কেউ কেউ আবার অনেক ব্যাংকের মালিকানায় যুক্ত। এতে ঋণ খেলাপি বা অন্য ব্যাংক লুট করে হলেও বাধা নেই। বাংলাদেশ ব্যাংকের নাকি এ ব্যাপারে কি কি নীতিমালা আছে।
এখনো বুজতে অসুবিধা হয়, চোর বাটপার গভর্ণর হিসাবে আমরা কেন স্বাধীন বাংলাদেশে মোনায়েম খানের নাম টেনে আনি? উনি পাকিস্তানের সমর্থক ছিলেন বলে? তাহলে এই যে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা তৈরী করেন এবং নিয়ন্ত্রণকারী গভর্ণররা বিভিন্ন সময়ে দায়িত্ব পালন করেন, তাদেরকে আমরা কি নামে ডাকবো?
তাদের চোখের অন্তরালে বাংলাদেশের ভান্ডার থেকে টাকা হ্যাক করে নিয়ে যায়, তার পরেও আমরা বাহবা দেই গভর্ণর সাহেবদের। তাদের সামনে সরকারী বেসরকারী ব্যাংক থেকে শত শত কোটি টাকা লুটপাঠ হয়ে যায়, কিন্তু কারো কিছু হয়না।
শেয়ার বাজারের কথা না তোলাই ভালো। সেখানেও প্রবাসীদের জন্য রয়েছে নানা প্রণোদনা। সেটাকে প্রণোদনা বলবো না প্রতারনা বলবো? কেউ প্রকাশ্যে ডাকাতি করলেও কারো বিচার হয়না। শেয়ার বাজারের বিখ্যাত একটি বাক্য প্রচলিত আছে, এটা হলো বিরাট এক দরবেশের নিয়ন্ত্রণে!
দরবেশ বাবা, গভর্ণর বাবাদের কারণে প্রবাসীদের কি দেশের সাধারণ মানুষের অবস্থাও কাহিল। কে শুনবে কার কথা?
আসেন এখানে আমাদের নামে গড়া তিনটি প্রবাসী ব্যাংকের কথায়। প্রথমে আমরা খুশিতে গদগদ হয়েছিলাম, আমাদের নিজস্ব ব্যাংক হচ্ছে, প্রবাসীদের বিনিয়োগে। সেবাও থাকবে প্রবাসী নির্ভর। ঘরে বসে সেবা, দেশে গেলে সেবা, ভবিষ্যতে প্রবাসে ব্রাঞ্চ ইত্যাদি কত কিছু। এক সাথে তিনটি ব্যাংক। বেশিরভাগ যুক্তরাজ্য প্রবাসি ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগে প্রতিষ্ঠিত হয় এনআরবি ব্যাংক। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশের প্রবাসীদের বিনিয়োগে প্রতিষ্ঠিত হয় আরও দুটি ব্যাংক। এন্আরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক। তিনটি ব্যাংকই প্রতিষ্ঠিত হয় ২০১৩ সালে। একটি ব্যাংকও এই সাত বছরে শেয়ার বাজারে যেতে পারেনি।
বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্রপত্রিকার খবর অনুযায়ী ব্যাংকগুলোর সাম্প্রতিক অবস্থান পাঠকদের সামনে তুলে ধরছি। পাঠকরাই বিবেচনা করবেন প্রবাসীর নামে ব্যবসা কত লাভজনক।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত তিনটি ননরেসিডেন্ট বাংলাদেশি ব্যাংক সহ বাংলাদেশের ৯টি ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৪৭৬ কোটি ৭২ লাখ টাকা। কিন্তু মাত্র ছয় মাস আগে এই খেলাপির পরিমাণ ছিল ৫ হাজার ২৫২ কোটি টাকা।
এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের বর্তমান খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ২০৫ কোটি ৫৩ লাখ টাকা; ডিসেম্বর শেষে যা ছিল ১২৯ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১৫০ কোটি ৪৭ লাখ টাকা, যা আগের বছর ছিল ১৪৬ কোটি ১৬ লাখ টাকা। এনআরবি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১৪৯ কোটি ৪৯ লাখ টাকা; আগের বছর যা ছিল ৯৮ কোটি ৫৭ লাখ টাকা।
অবৈধ সম্পদ ও শত শত কোটি টাকা সিঙ্গাপুরে পাচারের অভিযোগে এনআরবি ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালক এম বদিউজ্জামান ও তার দুই স্ত্রী মিসেস নাসরিন জামান এবং মিসেস তৌহিদা সুলতানার সম্পদের হিসাব চেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এম বদিউজ্জামান নাগরিকত্ব নিয়ে সিঙ্গাপুরে আত্মগোপন করেছেন বলে দুদকের কাছে তথ্য রয়েছে।
৩ হাজার ৬শ’ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্সের সাবেক এমডি প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পিকে হালদার কানাডায় চম্পট দেন।
এদিকে এন্আরবি ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ইকবাল আহমদ ওবিই বর্তমান চেয়ারম্যান মাহতাবুর রহমানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকে অভিযোগ করেছেন। অভিযোগে বলেন, প্রভাব খাটিয়ে এনআরবি ব্যাংকে একক আধিপত্য বিস্তার করেছেন চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মাহতাবুর রহমান নাসির। ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তাকে সরিয়ে পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন সুবিধা দেয়ার অভিযোগও উঠেছে তার বিরুদ্ধে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর ফজলে কবিরের কাছে তিনি এ অভিযোগ করেন। ছয় পাতার এ অভিযোগপত্রে প্রায় দুই ডজন অনিয়মের তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। তাদের অন্তর্দ্বন্ধের কারণে হতাশ রয়েছেন কিছু বিনিয়োগকারী ও ব্যাংকের সাথে সংশ্লিষ্টরা।
গত জুলাই মাসে এনআরবি কমার্শিয়াল (এনআরবিসি) ব্যাংকের পদত্যাগ করা সাবেক চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার ফরাছত আলীকে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আগামী দুই বছর যেকোনও ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক পদ থেকে তাকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ২০২২ সালের ২১ জুন পর্যন্ত দুই বছর নিষিদ্ধ থাকবেন তিনি।

ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স
এর হাল হকিকত
মাঝখানে বেশ কয়েকটি এয়ারলাইন্স করার নামে অনেক প্রবাসীর টাকা উড়াল হয়ে গেলো। গত ৩রা সেপ্টেম্বরের শেয়ার নিউজ অনলাইনের বরাত দিয়ে জানা গেছে, পুঁজিবাজারে কেলেঙ্কারির কারণে আলোচিত কোম্পানিগুলোগুলোর মধ্যে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ বাংলাদেশ লিমিটেড অন্যতম। চার বছর আগে উড়োজাহাজ চলাচল বন্ধ করে দেয়া কোম্পানিটির শেয়ার কিনে নিঃস্ব হয়েছে সাধারণ মানুষ। বর্তমানে এক থেকে দেড় টাকায় বিক্রি হচ্ছে কোম্পানিটির শেয়ার। ইউনাইটেড এয়ারওয়েজকে ঋণ দিয়ে বিপদে আছে একাধিক ব্যাংকও। এবার ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ কেলেঙ্কারির নেপথ্য নায়কদের আইনের আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটসহ (বিএফআইইউ) আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো। এর অংশ হিসেবে কোম্পানিটির সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মাহতাবুর রহমানের (নাসির) ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে। তলবকৃত ব্যাংক হিসাবের মধ্যে দেউলিয়ার পথে থাকা ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ বাংলাদেশ লিমিটেডের সিইও তাজবিরুল আহমেদ চৌধুরী, তার স্ত্রী খন্দকার তাসলিমা চৌধুরী ও ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ লিমিটেডও রয়েছে। বিএফআইইউ থেকে ২ সেপ্টেম্বর দেশের সবক’টি ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীকে চিঠি পাঠানো হয়। পাঁচদিনের মধ্যে তাদের সবার ব্যাংক হিসাবের যাবতীয় তথ্য বিএফআইইউতে পাঠাতে বলা হয়।
ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের সিইও তাজবিরুল আহমেদ চৌধুরী গণমাধ্যমকে মোবাইলে জানান, এ বিষয়ে এর আগেও বিভিন্ন সংস্থা তদন্ত করেছে। নতুন করে বিএফআইইউ কী তদন্ত করবে, তা বুঝে আসছে না। কোম্পানির কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে চার বছরের বেশি সময় ধরে। এখনো তাদের কাছে উড়োজাহাজের ইঞ্জিনসহ যেসব সম্পদ আছে, তা বিক্রি করে কোম্পানির দায়দেনা পরিশোধ করা সম্ভব হবে। তিনি এখনো এয়ারলাইনসটি চালু করার স্বপ্ন দেখছেন বলে জানান।
প্রবাসিদের সামান্যতম বিনিয়োগ রয়েছে এমন অনেক ভূইফোর প্রকল্পের পর প্রকল্প এবং দালালদের মোটাতাজা হবার অনেক গল্প, যে গল্পের শেষ নেই। আগেই বলেছি প্রবাসীদের নিয়ে এসব তামাশার কথা লিখতে কয়েক সিরিজ বই লেখা যাবে। এটা হতে পারে দস্যু বনহুর বা মাসুদ রানা সিরিজের মতো আকর্ষনীয়।
এর মাঝে আবার যারা কোনদিন প্রবাসে কাটায়নি অথবা বোঝেনা আমাদের দু:খ বেদনা, তারা বাংলাদেশে আমাদের নামে গড়ে তোলেছে বিভিন্ন সংগঠন, ফাউন্ডেশন। এদের কাজ হলো সব ভূয়া, কেবল আমাদের নাম ভাংগিয়ে সরকারের মন্ত্রী বা স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর তল্পিবাহক হয়ে ঘুরে বেড়ানো। আর সরকারী মন্ত্রীরা মনে করেন, বিরাট কাজ হলো আমরা সব সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে প্রবাসীদের আমাদের সাথে পেয়েছি।
একজন বিশেষ প্রবাসী দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে এ লেখা শেষ করছি। তার নাম সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। অত্যন্ত সজ্জন এই জননেতা দীর্ঘকাল বিলেতে নির্বাসিত জীবন কাটিয়েছেন। তারা বাবাও বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বংগবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহযোদ্ধা ছিলেন এবং কখনো তার নেতার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেননি। এমনকি জীবনের বিনিময়ে আমাদের সবার প্রিয় সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেটা প্রমান করে গেছেন।
যা হোক আমার কথাটি হলো মরহুম সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম কে নিয়ে। দূরারোগ্য এক ব্যাধীতে এই নেতার বলতে গেলে অকালে প্রয়াণ হয়। সম্প্রতি বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনকে বনানী কবরস্থানে দাফনকৃত সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের কবরটি সংরক্ষনের জন্য একটি নির্দেশ জারি করেছেন। দেখে খুব খুশী হয়েছি, অন্তত তার নজরে এটা এসেছে বলে। দু:খ লেগেছে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ও তার বাবার দল এখন ক্ষমতায় তবু এরকম নির্দেশ জারী না হলে হয়তো অবহেলা ও অবজ্ঞায় কিছূই হতোনা। আশাকরি কাজটি দ্রুত সম্পন্ন হবে। প্রবাসী হিসাবে এটা আমাদেরও দাবী।

দেশ ও জাতির নাম
ভাঙ্গিয়ে ব্যবসা!
একটা অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে এই বিশেষ প্রতিবেদনের সূচনা। কারি ব্যবসা কে কেন্দ্র করে কে কি ভাবে ব্যবসা করেন, এটা তাদের নিজস্ব ব্যাপার। কোন রেষ্টুরেন্ট কি প্রোডাক্ট বিক্রি করে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করছে এটা তাদের নিজস্ব ব্যাপার এবং পূর্ণ স্বাধীনতা রয়েছে তাদের। মার্কেট ইকোনমিতে এটাই নিয়ম এবং ক্রেতা বিক্রেতাদের থাকে নানা পছন্দ এবং প্রতিযোগিতা।
আগেই বলে নিচ্ছি কারি রেষ্টুরেন্টে বিক্রিত অনেক পণ্য আছে যাদের উপর আমরা নানা কারণে নির্ভরশীল। কারণ তাদের বিজ্ঞাপন, স্পনসরশিপের উপর আমাদের অনেকটা নির্ভর করতে হয়। তা না হলে আমরাও আমাদের ব্যবসাগুলোকে সে ভাবে সাপোর্ট করতে পারবোনা। তার পরেও কিছু কথা থেকে যায়, তাই এই নিবন্ধের অবতারণা।
বাংলাদেশি ও ইন্ডিয়ান রেষ্টুরেন্টে বিক্রয় হয় একটি বিয়ার ব্রান্ড হলো বাংলা বিয়ার। এটার জন্ম ১৯৯৭ সালে । কিন্তু বিভিন্ন সময়ে এর মালিকানার পরিবর্তন হয়েছে। পরিবর্তন হয়েছে তাদের মার্কেটিং এর কলা কৌশল। এই বাংলা বিয়ার অন্যান্য বিয়ার ব্রান্ডের মতো কারি লাইফে দীর্ঘদিন বিজ্ঞাপন দিয়েছে। আমরা তাদের এই সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞ কিন্তু তাদের কিছু মার্কেটিং কর্মকান্ড নজরে আসায় আমরা সত্যিকার ভাবে আহত হয়েছি। এই বিষয়টি বর্তমান বাংলা বিয়ার কর্তৃপক্ষের নজরে আনার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি, তাই এই নিবন্ধের অবতারনা। প্রায় এক বছর পূর্বে তাদের কাছে আমরা লিখিত প্রশ্ন পাঠিয়েছিলাম এটার নাম কেন বাংলা, এর সাথে বাংলাদেশের কোন সর্ম্পর্ক আছে কি? এমন কি কোন কোন ডিলারের ওয়েবসাইটে এমনভাবে লেখা আছে যেন এটি বাংলাদেশের বিয়ার যা আমরা মনে করি বিভ্রান্তিকর। আমরা তাদের কাছ থেকে এই প্রশ্নগুলোর কোন জবাব আজ পর্যন্ত পাইনি। এমন কি এক সময় তাদের বোতলের লেভেলে বাংলাদেশের মানচিত্রও আকা ছিল। বিজ্ঞাপনে লেখা থাকতো বিয়ার অব বেঙ্গল। 
বাংলা বিয়ারের এই মার্কেটিং কাদের টার্গেট করে করা হচ্ছে তা আমাদের বোধগম্য নয়। আমরা সবাই জানি ধর্মীয় কারণে বেশির ভাগ বাংলাদেশীরা বিয়ার পান করেন না। তবে বাংলাদেশীরা তাদের রেষ্টুরেন্টে বিয়ার এবং অন্যান্য পানিয় বিক্রি করেন এবং এটা তাদের নিজস্ব ব্যাপার। কিন্তু খুব কম বাঙালী নিজেরা অ্যালকোহল পান করেন। প্রশ্ন হলো এই বিয়ারের ডিষ্ট্রিবিউটর ও বিয়ার কোম্পানী তাহলে কি চান বাংলাদেশে তৈরি বলে বাংলাদেশিরা এই বিয়ার পান করুক? না আমাদের এটা বাংলাদেশে তৈরী একটা পানিয় হিসাবে রেষ্টুরেন্টে বিক্রী করার জন্য উৎসাহিত করতে চান? বাংলা নামের বিয়ারটা মুসলিম প্রধান বাংলাদেশে তৈরী নয়। এটা ধ্রুব সত্য। এটা বাংলাদেশ থেকে ব্রিটেনে আমদানীও করা হয়না। তবে হ্যা শুনেছি ভারত, শ্রীলংকা এবং অন্যান্য দেশ থেকে ব্রিটেনে বিয়ার এবং অন্যান্য পানীয় আমদানী করা হয়।
বাংলা বিয়ারের মালিক গোষ্ঠী শাপলা নামে একটা মিনারেল ওয়াটার ও বিক্রি করেন। এটাও এখানে তৈরী। শাপলা যদিও বাংলাদেশের জাতীয় ফুল তবু আমরা জানি শাপলা পানি হলো এখানকার একটা ব্র্যান্ড। আমাদের কোন আপত্তি নেই। তারা আমাদের বাংলাদেশী রেষ্টুরেন্টগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য এটা করে থাকতে পারেন। কিন্তু তারা বলছেন না এটা বাংলাদেশে তৈরী।
বাংলা নাম দিয়েতো সুড়সুড়ি দিয়ে বাংলাদেশি রেষ্টুরেন্ট মালিকদের কাছে বিয়ার বিক্রি অনেকে মেনে নিয়েছেন, কিন্তু মুসলিম প্রধান দেশ হিসাবে বাংলাদেশে তৈরি বিয়ার বলে বাংলা বিয়ার বিক্রি কতটুকু মেনে নেবেন বাংলাদেশিরা সেটা আমরা বুঝতে পারছিনা। কিছু কিছু সাপ্লায়ারদের ওয়েবসাইটে এই বিয়ারের বাংলাদেশে অরিজিন বলে প্রচারণা চালানোও এক ধরণের প্রতারণার সামিল। কেন সেটা করা হবে, কেন প্রতারণার আশ্রয় নেয়া হবে?
যদি বাংলা বিয়ার সত্যি বাংলাদেশে তৈরী হয়ে থাকে, তাহলে আশাকরি আমাদের হাই কমিশন এ ব্যাপারে কোন বক্তব্য দেবেন।

Share it in social media


আরও খবর