বাউন্স ব্যাক লোন ও ফারলো স্কীম নিয়ে জালিয়াতি

 

 

করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত সংকটকালীন সময়ে ব্যবসা ও কর্মজীবিদের জন্য সরকারের চালু করা বাউন্স ব্যাক লোন স্কীম ও ফারলো স্কীম নিয়ে নানা জালিয়াতির খবর পাওয়া যাচ্ছে। এনিয়ে সরকারের প্রতি তদন্তের দাবী উঠেছে। ব্যবসার উন্নয়নের জন্য বরাদ্দকৃত ঋণের অর্থ দিয়ে ভাড়া দেয়ার জন্য বাড়ি কেনা, নতুন গাড়ি ক্রয় বা অন্যভাবে তা ব্যয় করা হচ্ছে বলে নানা অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এ পর্যন্ত ব্যবসার জন্য এক মিলিয়নেরও বেশি বাউন্স ব্যাক লোন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে,যার পরিমাণ ৩৮ বিলিয়ন পাউন্ডেরও উপরে। ইতোমধ্যেই এইচএম্আরসি অর্থাৎ সরকারের রেভিনিউ এ্যান্ড কাস্টমস ২৭,০০০টি উচ্চ ঝুকির ক্লেইম এর খুটিনাটি পরীক্ষা করে দেখছে। এরমধ্যে কিছু সংখ্যক সন্দেহজনক জালিয়াতির ঘটনা তদন্ত করছে। সম্প্রতি লন্ডনের ওয়ালথামস্টো এলাকায় ৭০ হাজার পাউন্ড বাউন্স ব্যাক লোন জালিয়াতি সন্দেহে দুই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়।
সাফোক পুলিশ আগস্টে এক লাখ ১০ হাজার পাউন্ডের ক্রিপ্টো কারেন্সি জব্দ করেছে। এগুলো বাউন্স ব্যাক লোন এর সাথে সংশ্লিষ্ট বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। ৩৫ বছর বয়স্ক এক মহিলাকে মানি লন্ডারিং ও জালিয়াতির সন্দেহে গ্রেফতার করা হয়।
করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ফলে বিপর্যস্ত অর্থনীতিকে সাহায্য করতে, মানুষের কর্মসংস্থান বহাল রাখতে ও ব্যবসা সমুহকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো যুক্তরাজ্য সরকারও নানা পদক্ষেপ নেয়। এরমধ্যে সবচেয়ে প্রশংসনীয় ও ঐতিহাসিক উদ্যোগ হচ্ছে চ্যান্সেলর রিশি সোনাকের ফারলো স্কীম ও বাউন্স ব্যাক লোন। ফারলো স্কীমের অধীনে গত মার্চ থেকে নিয়ে অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় ৯ মিলিয়ন ওয়ার্কারের ৬০ থেকে ৮০ পারসেন্ট বেতন পরিশোধ করে সরকার। এতে প্রায় ৪০ বিলিয়ন পাউন্ড ব্যয় হয়েছে সরকারি কোষাগার থেকে। অন্য স্কীমটি হচ্ছে বাউন্স ব্যাক লোন। ক্ষুদ্র ও মাঝারি সাইজের ব্যবসাগুলোকে সাহায্য করার জন্য কোন গ্যারান্টি ছাড়া ৫০ হাজার পাউন্ড ঋণ দেয়ার সরকারের এই পরিকল্পনা সর্বত্র প্রশংসিত হয়। এই ঋণের বিপরীতে ১০০ভাগ গ্যারান্টর সরকার যা ৬ বছরের মধ্যে পেিরশাধ যোগ্য। মাত্র ২ দশমিক ৫ পারসেন্ট সূদের এই ঋণের জন্য প্রথম বছর কোন পেমেন্ট দেয়া লাগবেনা এবং পরের পাঁচ বছরে তা পেমেন্ট করতে হবে। গত ২৪ সেপ্টেম্বর চ্যান্সেলর রিশি সোনাক এই রিপেমেন্ট সময় ১০ বছর পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছেন।

ফারলো স্কীম জালিয়াতি
ফারলো স্কীম নিয়ে জালিয়াতির অনেক ঘটনা ধীরে ধীরে উদঘাটিত হচ্ছে। কাজ করে ফারলো স্কীমের অর্থ দাবি, এম্পলয়ারগণের ফারলো স্কীমের অর্থ এম্পলয়ারগণ হস্তগত করা ইত্যাদি নানা অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এইচএম আরসি কর্মকর্তারা মনে করছেন ফারলো স্কীমে জালিয়াতির পরিমাণ সাড়ে তিন বিলিয়ন পাউন্ড হতে পারে। অডিটররা এনিয়ে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছেন। সঠিক পরিমাণ জানতে অনেক সময় লাগবে বলে একজন মুখপাত্র উল্লেখ করেছেন।

বাউন্স ব্যাক লোন
বাউন্স ব্যাক লোন নিয়ে অনেকেই অন্যখাতে তা বিনিয়োগ করছেন এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিভিন্ন পত্রিকার রিপোর্টে জানা যায় নর্থ ইষ্ট ইংল্যান্ডে বাড়ি ঘরের দাম বেড়ে গেছে এবং বিনিয়োগকারীরা নগদ অর্থ দিয়ে বাড়ি কিনছেন। প্রপার্টি ব্রোকাররা জানান কিছু সংখ্যক মানুষ বাউন্স ব্যাক লোন ডিপোজিট হিসাবে জমা দিয়ে বাড়ি কিনতে তাদের সাথে যোগাযোগ করেন। ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকার এক রিপোর্টে জানা যায়, নর্থ ইষ্ট ইংল্যান্ডের সান্ডারল্যান্ড ইত্যাদি শহরে বিনিয়োগকারীরা বাড়ি পরিদর্শন না করেই নগদ অর্থে তা কেনার জন্য চেষ্টা করছেন। পত্রিকাকে একজন প্রপার্টি ব্রোকার জানান, লন্ডন থেকে ক্রেতারা বাউন্স ব্যাক লোনের ৫০ হাজার পাউন্ড নগদ নিয়ে না দেখেই নর্থে বাড়ি ক্রয় করছেন।
বিল্ডিং ট্রেডে কর্মরত মার্ক টেলিংস নামের একজন বিবিসিকে বলেন, তার আইডি জালিয়াতি করে ভুয়া কোম্পানী বানিয়ে ৫০ হাজার পাউন্ড বাউন্স ব্যাক লোন তুলে নেয়ার একটি ঘটনা ঘটেছে। বিবিসির তদন্তে উঠে এসেছে ক্রিমিনালরা ভূয়া কোম্পানী সাজিয়ে বিপুল হারে বাউন্স ব্যাক লোন নিয়েছে যার মূল লক্ষই এই লোন বা ঋণ আর পরিশোধ না করা। জালিয়াতি ঘটনা তদন্তকারী একজন বলেন, ‘মনে হচ্ছে ক্রিমিনালদের জন্য এটি ফ্রি মানি’। তিনি মনে করেন হাজার মানুষ এধরণের জালিয়াতিতে যুক্ত রয়েছে। বিবিসি সূত্রে জানা যায় এই সরকারি লোন ঘোষণার পর থেকে কোম্পানী হাউসে কোম্পানী রেজিষ্টার করার সংখ্যা বেড়ে গেছে।

ইন্ডিয়ান রেষ্টুরেন্ট সেক্টরে
বাউন্স ব্যাক লোন ও ফারলো স্কীম
চ্যান্সেলর রিশি সোনাকের বিভিন্ন স্কীম পুরো হসপিটালিটি সেক্টরে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। তার বাউন্স ব্যাক লোন, ফারলো স্কীম ও ইট আউট টু হেল্প আউট স্কীম ও ভিএটি ২০ পারসেন্ট থেকে কমিয়ে ৫ পারসেন্টে নিয়ে আসা ইত্যাদি শুধু ইন্ডিয়ান রেষ্টুরেন্ট সেক্টরে প্রশংসিতই হয়নি সবাই এর সুফলও পেয়েছেন। বিশেষ করে আগষ্টমাসে ইট্ আউট টু হেল্প আউট স্কীমে সবাই খুব ভাল ব্যবসা করেছেন। বাউন্স ব্যাক লোন ও সরকারের অনুদান পেয়েছেন বেশিরভাগ রেষ্টুরেন্ট ও টেকওয়ে।
যেমনটি সুফলও পেয়েছেন তেমনি ফারলো এবং বাউন্স ব্যাক লোন নিয়ে কমিউনিটিতে নানা অভিযোগ শোনা যাচ্ছে। এরমধ্যে কিছু সংখ্যক রেষ্টুরেন্ট ও টেকওয়ে মালিকের বিরুদ্ধে ফারলোর অর্থ আত্মসাথ, বাউন্সব্যাক লোন নিয়ে পার্টনারদের মধ্যে দ্বন্ধ, এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে পার্টনার লোনের অর্থ আত্মসাৎ করে লাপাত্তা হওয়ার খবর শোনা গেছে। লোনের অর্থ দিয়ে গাড়ি বাড়ি কেনা এমন খবরও পাওয়া গেছে, যদিও এই অর্থ শুধুমাত্র ব্যবসার উন্নয়নে ব্যয়ের জন্যই দেয়া হয়েছ্।ে আরও গুরুতর অভিযোগ হলো কিছু সংখ্যক দালাল চক্র বিশাল কমিশন নিয়ে নাম সর্বস্ব কোম্পানীর মাধ্যমে ব্যাংক থেকে লোন নিচ্ছে। এমনও গুজব শোনা যায় ব্যাংক এর সাথে তাদের যোগসাজশ রয়েছে। এই জালিয়াত চক্র নাম সর্বস্ব কোম্পানী মালিকদের সন্ধানে থাকে এবং তাদের কোম্পানীর জন্য লোন আনতে উদ্বুদ্ধ করে। এরমধ্যে কিছু রেষ্টুরেন্ট ব্যবসায়ীও জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসবের ভিত্তিতেই সরকারি তদন্ত শুরু হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন রেষ্টুরেটার্স জানান, দুটি রেষটুরেন্টের মালিক তিনি। একটি রেষ্টুরেন্টে পার্টনার ও অন্যটি তিনি পরিচালনা করেন। যেটিতে পাটনার আছেন সেটির ব্যবসা এতো ভাল নয়। লকডাউন শুরুর প্রথম দিকেই ঐ রেষ্টুরেন্টের পার্টনার তাকে না জানিয়ে ব্যাংক থেকে ৫০ হাজার পাউন্ড লোন নিয়ে আত্মসাত করেন এবং পরবর্তীতে পার্টনারশীপ ভেঙ্গে যায়। রেষ্টুরেটার্স জানান, তা ভেঙ্গে গেলেও নগদ এই অর্থ নিয়ে সরে গিয়ে তার অন্য পার্টনারই লাভবান হয়েছেন।
আবার অন্য আরেক রেষ্টুরেটার্স জানান, পার্টনারশীপ থাকার কারণে তিনি বাউন্সব্যাক লোন নেননি। স্বভাবতই এ নিয়ে তাদের মধ্যে কোন ভুল বুজাবুঝির সৃষ্টি হোক তা তিনি চাননি। তবে তিনি মনে করেন বিজনেসে ব্যয়ের জন্য এই লোনটা নেয়া জরুরী ছিল।
অন্যদিকে রেষ্টুরেন্ট নয় এমন একটি ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক জানান, তারা দুই পার্টনার ব্যবসা পরিচালনা করেন। এক পার্টনারের ইচ্ছে ৫০ হাজার পাউন্ড বাউন্সব্যাক লোন এনে তাদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিতে। পরে যার যার অংশ নিয়ম অনুযায়ী তারা পরিশোধ করবেন। যেহেতু ব্যবসার উন্নয়নে এই অর্থ ব্যবহার করা হবে না, তাই প্রথম পার্টনার ঋণের বোঝা বাড়াতে অস্বীকৃতি জানান। এই প্রসঙ্গে তাদের দ্বিমত হওয়ার কারণে পার্টনারশীপ ভেঙ্গে যায়।
ইন্ডিয়ান রেষ্টুরেন্ট সেক্টরে অনেকের মধ্যেই ্একটা কানাঘুষা রয়েছে হয়তোবা এই লোন এর অর্থ আর ফেরত দেয়া লাগবেনা। জালিয়াতরা নানা ধরণের গুজব ছড়াচ্ছে। স্কাই নিউজের সর্বশেষ খবর হল্ োদেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যাংকগুলোর কর্মর্তারা আলোচনায় বসেছেন কিভাবে একযোগে একটি সংস্থা তৈরি করে এই লোন এর অর্থ ফিরিয়ে আনা যায় যা আগামী বছর থেকে ঋণগ্রহীতারা পরিশোধ করবেন। এ ব্যাপরে ব্যাংকিং লবি গ্রুপ ইউকে ফিন্যান্স একটি সম্ভাব্যতা যাচাই কমিটি গঠন করেছে। ব্যাংকগুলো মনে করছে এক মিলিয়নের বেশি ্ঋণগ্রহীতার পেছনে লোন উদ্ধারে দৌড়ানোতে তাদের মান মর্যাদার ব্যাপারটি জড়িত রয়েছে।

Share it in social media


আরও খবর