ভাইয়া সাপ্লায়ারদের কথা

 

ভাইয়া সাপ্লায়ারদের কথা
কারি ইন্ডাষ্ট্রিতে ভাইয়া ভাইয়া বলে কিছু সাপ্লায়ার আপনাকে মালামাল সরবরাহ করছেন বা সেবা দিচ্চেছন। এসব ভাইয়াদের কাছ থেকে মালামাল কিনতে আপত্তি নেই, তবে তারা যেন আপনার দুর্বলতার সুযোগ না নেয় সে দিকে লক্ষ্য রাখবেন। এ বিষয়ে লিখেছেন আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক।
ভাইয়াদের কথা। না না এরা আপনার আমার আপন ভাই নয়। আমি বলছি সেসব ভাইয়াদের কথা যারা প্রতিনিয়ত ভাইয়া ভাইয়া বলে আমাদের রেষ্টুরেন্টগুলোতে মালামাল সাপ্লাই দেন বা বিক্রি করেন। এসব ভাইয়াদের অনেকে যে মালামাল সাপ্লাই বা বিক্রি করার নামে বেশি চার্জ করে উব্বো আমাদের বোকা বানান তা আমরা কতুটুকু উপলব্দি করি বা বুজতে পারি?
আমদের বিশাল কারি ব্যবসার সাপ্লাই চেনটা এখনো অন্যান্য দেশীয় ভাইয়াদের কবলে রয়েছে। যদিও বেশীর ভাগ রেষ্টুরেন্ট বাংলাদেশী কিন্তু বিদেশী ভাইয়াদের সাপ্লাইয়ে আধিপত্য বেশী। বর্তমানে কিছু কিছু বাংলাদেশী এই সাপ্লাই ব্যবসায় নেমেছেন, কিন্তু সেখানেও নানা জটিলতা রয়ে গেছে।
আমি আমাদের ভাইয়া বলে আদর করে যারা তাদের মালামাল দিয়ে যান তাদের কথা এখানে বেশী আলোচনা করতে চাই। আমাদের বাংলাদেশী রেষ্টুরেন্ট সাপ্লায়ার যেহেতু কম, তাদের কথা পরবর্তীতে লিখবো। অবশ্যই তাদের সাপ্লাই প্রোডাক্ট ও সেবার মান কিভাবে উন্নত করা যায় সে ব্যাপারে নিশ্চয়ই গঠনমূলক সমালোচনা করবো।
ভাইয়াদের কথায় আসা যাক। অবস্থা দৃশ্যে মনে হবে সাপ্লাইয়ার ভাইয়ারা আমাদের অত্যন্ত আপনজন। নিজের ভাইয়ার উপরেও হয়তো আমরা এত নির্ভর করিনা। কিন্তু আমরা কি নজর রাখি ভাইয়ারা আমাদের কত চার্জ করেন এবং কি রকম কোয়ালিটির মালামাল দিচ্ছেন অনেক সময় রেষ্টুরেন্টের মালিকরা উপস্থিত না থাকলেও ভাইয়ারা মালামাল ডেলিভারী দিয়ে চলে যান। যাওয়ার পরে আমরা খুজে পাই এই আইটেম আসে নাই, অথবা এই ব্রান্ডের বদলে ভাইয়া তার পছন্দের ব্রান্ডটি আমার গলায় ঝুলিয়ে পালিয়েছেন। রেষ্টুরেন্ট মালিকরাও অনেক সময় এ নিয়ে টু শব্দ করেন না, কারণ ভাইয়া যে ক্রেডিটে মালামাল দিয়ে যাচ্ছেন।
অনেকে মনে করেন এটা আমার জন্য বিরাট সুযোগ। ক্ষুদ্র ব্যবসা হিসাবে আমাকে ভাইয়া আদর করে ক্রেডিট দিচেছন। দাম না হয় একটু বেশীই রাখলেন, কিন্তু পরের মাসের সাপ্লাইয়ের সাথে আমি বিল পরিশোধ করার সুযোগ পাচ্ছি। এমন কদর আর করে কে! দিনে দিনে দেনা বাড়তে থাকে এবং যত পারা যায় আমরা ভাইয়ার সামনা সামনি হইনা এবং তাকে মোকাবেলাও করিনা।
এদিকে ভাইয়া হয়তো দুচার বিলের মাধ্যমে লাভের টাকা পুরোটাই হয়তো তুলে নিয়েছেন, কিন্তু তারপরেও ভাইয়া আপনার (বাকি কেনার ) দুর্বলাতার সুযোগে এক সময় সমাজের বিভিন্ন জনের কাছে আপনার ব্যাপারে দূর্নাম গাইতে শুরু করেন। দুনা‍র্মটা এরকম আপনি মানুষ ভালো না, তার অনেক টাকা আটকে পড়ে আছে বাকিতে ইত্যাদি ইত্যাদি। ভাইয়া কিন্তু চাইলেই আপনাকে যে কোন সময় সাপ্লাই দেয়া বন্ধ করতে পারতেন এবং পারেনও কিন্তু তিনি সেটা না করে আপনার উপর সামাজিক ভাবে চাপ সৃষ্টির চেষ্টা অব্যাহত রাখেন। আপনার কাছ থেকে নানা কৌশলে আরো ব্যবসা বা ফায়দা কিভাবে লুঠা যায় এর ধান্ধায় থাকেন।
এই রকম ইন্ডাষ্ট্রিতে বহূ পুরানো এক ভাইয়া সাপ্লা’য়ার আছেন। তার পরিবার আত্মীয় স্বজনের মালটিপল সাপ্লাই ব্যবসা আছে। আমাদের ইন্ডাষ্ট্রিতে সাপ্লাই দিয়ে যাচ্ছেন এবং আংগুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন আমাদের মালামাল সাপ্লাই দিয়েই। তবু সুযোগ পেলে বাঙালিদের দূর্নাম গাইতে ভাইয়া কখনো ভুল করেন না। দু:খজনক হলেও সত্য এইসব ভাইয়াদের কাছে আমাদের তথাকথিত কিছু নেতাদের অনেকেও নানা প্রলোভনে পড়ে মাথা বন্ধক দিয়ে রেখেছেন, তাই ভাইয়াদের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলতে পারেননা।
যাই হোক বিপদের সময় চেনা যায় কে শত্রু আর কে মিত্র। করোনা ভাইরাস নিয়ে এই বিপদের সময় এই ভাইদের না চিনলেও নিশ্চয়ই আমদের কারি হাউসের ভাই বন্ধুরা চিনতে পারবেন বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। আমরা যেহেতু কারি লাইফ চালাই এসব ভাইয়াদের আমাদের নানা সময়ে সম্মুখীন হতে হয়। ভাইয়াদের ব্যাপারে আমাদের ছোট খাটো দু একটা অভিজ্ঞতার কথা তুলে বিদায় নেবো। আশাকরি আপনারাও আপনাদের অভিজ্ঞতা আমাদের জানাবেন।
এদেশে দুর্যোগ, দু:সময় বা দুর্ঘটনায় যাতে আর্থিক সংকটে না পড়েন তাই ব্যবসা সুরক্ষায় সবাই ইন্সুরেন্স করে থাকেন। পিস অব মাইন্ড এর জন্যে হাজার হাজার পাউন্ড খরচ করে থাকেন। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কালে দেখা গেছে ব্যবসাগুলো ইন্সুরেন্স কোম্পানীর সাথে বিরোধে জড়িয়ে পড়ছে। কারি ইন্ডাষ্ট্রীতেও অনেক ক্লায়েন্ট রয়েছে কিছু কিছু ইন্সুরেন্স কোম্পানী ও ব্রোকারদের। এদের মধ্যে কেউ কেউ সেই ভাইয়াদের মতো আপনজন সেজে কিন্তু ব্যবসাটি বাগিয়ে নিয়েছেন। করোনা ক্রাইসিসে এই বিপদের সময় প্রতিটি রেষ্টুরেন্ট ব্যাবসার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে এবং এখনও হচ্চেছ। লকডাউনের কারণে অনেকে শুধূ টেকওয়ের জন্য ব্যবসা খোলা রেখেছেন। ব্যবসা লসের ক্লেইম করতে গিয়ে অনেক রেষ্টুরেটার্স হিমশিম খাচ্চেছন। অনেক কে বলা হচ্ছে এধরণের ঘটনায় তাদের কোন কভার নেই। মহা বিপাকে পড়েছেন অনেক ব্যবসায়ী। দেখা যাচ্ছে ইন্সুরেন্স থেকে কোন সাহায্য পাচ্ছেন না।
কয়েকজন রেষ্টুরেটার্স অভিযোগ করে বলেন আমাদের ইন্ডাষ্ট্রিরও এক ব্রোকার ভাইয়া আছেন, তার আচরণে তারা হতাশ। অনেক অনুষ্ঠানেও তাকে দেখা যায়। ব্রোকার ভাইয়ার সাথে যোগোযোগ করলে জানান আপনারতো ব্যবসা লসের এই কাভার নেই, এমনটিই জানালেন কয়েকজন ভুক্তভোগি। যেহেতু তিনি ব্রোকার, ইন্সুরেন্স বিক্রির আগে নিশ্চয়ই কাস্টমা’রদের ভাল খাবার নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু সেটাতো অনেকেই জানেনা! আমরা বিভিন্ন সময় মানুষকে বিশেষ করে ‘ভাইয়াদের’ বেশী বিশ্বাস করি এবং তাই ঠকিও বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে। কারি লাইফ এর একটাই অনুরোধ থাকবে, ভবিষ্যতে ব্যবসায়ীরা যেন স্মল প্রিন্ট পড়ে সবকিছুতে চুক্তিবদ্ধ হন। হোকনা সে টেকনোলোজি কোম্পানী, ডেলিভারি অথবা রেষ্টুরেন্ট বুকিং কোম্পানী অথবা ইন্সুরেন্স কোম্পানী।
আরেক ভাইয়ার কথা বলি। রেষ্টুরেন্টে চকলেট সাপ্লাইয়ের ব্যবসা আছে অনেক। ভালমন্দ, দামী কমদামী প্রডাক্টও রয়েছে। অতীতে আমাদের রেষ্টুরেন্ট গুলো টপ ব্রান্ডের ‘আফটার এইট’ মিন্ট ব্যবহার করতো বেশি। এখন অনেক কোম্পানীর সাব স্ট্যান্ডার্ড চকলেটও নেন রেষ্টুরেন্ট ব্যবসায়ীরা পয়সা বাচানোর জন্য। আর এই সুযোগটাই নেয় অনেক সাপ্লায়ার। আগে যে বলেছি, একই ভাবে তথাকথিত ফ্রেন্ডশীপ হয়ে যায় ব্যবসায়ীদের সাথে এ সকল ভাইয়াদের। এরকম এক চকলেট সাপ্লায়ার কিছু রেষ্টুরেটার্সদের বিরুদ্ধে কারি কমিউনিটিতে তার দেনা পাওনা নিয়ে প্রকাশ্যে প্রচারণা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভাইয়াদের এসব প্রচারণায় সামাজিকভাবে বিব্রত রয়েছেন কেউ কেউ। অনুসন্ধানে দেখা গেছে কিছুভাইয়া নতুন নামে পুরাতন প্রডাক্টের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন, এসব রেষ্টুরেটার্সদের সাথে। এক কথায় যাকে বলে নতুন বোতলে পুরানো মদ। এদেশে যেকোন কোম্পানীর সাথে ব্যবসা শুরুর আগে ক্রেডিট চেক ও কোম্পানী হিষ্ট্রি দেখা যায় সহজে, সেটি দেখে সিদ্ধান্ত নিবেন ভবিষ্যতে।
যাই হোক এসব আপনাদের সাথে শেয়ার করার কারণ, আপনারা মনোবল শক্ত রাখবেন। সামনে বড় কঠিন সময়। রেষ্টুরেন্ট টেকওয়ে নিয়ে লড়াই করতে হবে আমাদের। অনেক ভাইয়াই আমাদের দুর্বলতার সুযোগ নেবে। তারা মিলিয়নস অব পাউন্ড বানিয়েছেন, এতে আমাদের আপত্তি নেই। তবে আমাদের ক্ষুদ্র ব্যবসাগুলো বাচিয়ে রাখতে হবে। যে কোন ভাইয়াকে মিষ্টি কথায় অথবা আপনাকে যাতে দুর্বল না ভাবে সেজন্যে সহজে প্রশয় দেবেন না। আগে আপনার ব্যাবসার লাভ লোকসান বিবেচনা করবেন। মালামালের মান এবং মূল্য ভালো করে চেক করে দেখবেন তার পরে সাপ্লাই নেবেন। মনে রাখবেন এরা কেউ আপনার আপন ভাই নয়, এরা ভাইয়া বলে তাদের স্বার্থের কারণে।

Share it in social media


আরও খবর