ব্রিক লেন নিয়ে যত কান্ড!

 

কারি ক্যাপিটাল খ্যাত লন্ডনের ব্রিক লেনে যান চলাচল বন্ধ করে শুধুমাত্র পথচারীদের জন্য খোলা রাখায় বাংলা টাউনের ব্যবসায়ী ও বাসিন্দারা এর পক্ষে বিপক্ষে দ্বিধা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। ব্যবসায়ী ও বাসিন্দা এক পক্ষ স্থানীয় টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের কাছে রাস্তাটি অবিলম্বে যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়ার আহবান জানিয়েছেন। তারা দাবী করছেন তাদের ব্যবসায় এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এক সাংবাদিক সম্মেলনে কিছু ব্যবসায়ী রাস্তা বন্ধে নানা অসুবিধার কথা তুলে ধরেন । অন্য দিকে বাংলা টাউন রেষ্টুরেন্ট এসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ দাবী করছেন রাস্তা বন্ধে তারা আশা করছেন তাদের ব্যবসায় উন্নতি ঘটবে এবং এর কিছুটা আভাস তারা দেখতে পাচ্ছেন। গত ২৭ আগস্ট থেকে আগামী ৫ নভেম্বর পর্যন্ত প্রায় ১০ সপ্তাহের জন্য টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল অস্থায়ীভাবে ব্রিকলেনে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেয়। খোলা রাখা না রাখার ব্যাপারে ভবিষ্যতে কোন প্রস্তাবের ব্যাপারে স্থায়ী সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে কাউন্সিল এর প্রভাব বিবেচনা করবে এবং ব্যবসায়ীদের সাথে আলোচনা অব্যাহত রাখবে বলে কারি লাইফকে জানায়। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা কারি লাইফকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।
সম্প্রতি লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বাংলা টাউনে ব্যবসায়ী ও বাসিন্দাদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন, জামাল খালিক, পারভেজ কোরেশী, তৈয়ব আলী সাজু ও ক্রিস ডায়সন। তারা বলেন, রাস্তা বন্ধের কারণে শুধুমাত্র ব্যবসায়ই প্রভাব পড়েছে তা নয়, সাধারণ মানুষের চলাফেরা ও অনেকের জীবন জীবিকায় আঘাত হানা হয়েছে। অনেক ব্যবসার অস্তিত্ব বিপন্ন। একটি লিখিত বক্তব্যে তারা দাবী করেন, ব্রিকলেন রেষ্টুরেন্ট ও কিছু বুটিক শপের জন্য বিখ্যাত, বিশেষ করে বাংলাদেশি কমিউনিটির মানুষ সারা যুক্তরাজ্য এমনকি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের টুরিষ্টরাও ব্রিকেলেনে আসেন। অধিকাংশই ট্যাক্সি অথবা মিনি ক্যাবে আসেন। বর্তমানের রাস্তার মাথায় রোড ক্লোজ সাইন ভিন্ন বার্তা পৌছে দিচ্ছে তাদের কাছে অর্থাৎ ব্রিকলেন বিজনেসের জন্য বন্ধ ঘোষণা বুঝাচ্ছে।
তাছাড়া রাস্তা বন্ধ থাকা স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তার জন্য ঝুকি নিয়ে এসেছে। অপ্রশস্ত রাস্তাগুলিতে ইমার্জেন্সি যানের যেমন, এম্বুলেন্স, ফায়ার ব্রিগেড, ডাস্টবিন লরি প্রবেশে অসুবিধা হবে। কোন দুর্ঘটনা বা অগ্নিকান্ডে ভয়াবহ পরিণত হতে পারে। ব্রিকলেন মসজিদে বয়স্ক মানুষের হেটে আসতেও অসুবিধা, কারণ তাদের আত্মীয়স্বজনরা মুসল্লীদের গাড়িতে করে ড্রপ করে যান। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে মালামাল ডেলিভারীতে অসুবিধা হচ্ছে। ট্রাফিক ডাইভারশনের কারণে দুর্ঘটনার ঝুকিও রয়েছে।
সাংবাদিক সম্মেলনে তারা দাবি করেন, কোন যথাযথ কনসালটেশন ছাড়াই কাউন্সিল বন্ধের ৪/৫দিন পূর্বে একটি লিফলেট দিয়ে ব্যবসায়ীদের রাস্তা বন্ধের কথা জানিয়ে দেয়। রাস্তা বন্ধ থাকলে ২/৩ মাসের মধ্যে অনেক ব্যবসাকে পাততাড়ি গোটাতে হবে বলে তারা মনে করেন। তারা জানান, ব্রিকলেনের পুলিশ স্টেশনটিও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এবং এতে ড্রাগস বেচাকেনাও বৃদ্ধি পেতে পারে বাংলা টাউনে। রাস্তাটি দিনের একটি নিদ্র্ষ্টি সময় বন্ধ রাখা যেতে পারে বলেও তারা সুপারিশ করেন।
বিশিষ্ট ব্যবসায়ী বাংলা টাউন ক্যাশ এ্যন্ড ক্যারির রফিক হায়দারও রাস্তা বন্ধের কারণে তার ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে জানান। তিনি জানান রাস্তা বন্ধ থাকার কারণে মানুষ ঘুরাফিরা করে বিরক্ত হয়ে এলাকা ত্যাগ করে চলে যায়। তিনি কাউন্সিলকে ব্রিকলেন খোলা রাখার আহবান জানান।
ব্রিকলেন ও আশেপাশের বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীদের স্বাক্ষর করা একটি পিটিশন কাউন্সিলে পাঠানো হচ্ছে বলে সাংবাদিক সম্মেলনে জানানো হয়।
ব্রিকলেনের অফ রোড হেনেজ ষ্ট্রীটে ৪৩ বছর থেকে টেলিভিশন ও ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী মেরামতের একটি দোকান পরিচালনা করেন জভেদ ইকবাল। তার ব্যবসাও রাস্তা বন্ধের কারণে ক্ষতির সম্মুখীন হবে বলে তিনি মনে করেন। ষাটোর্ধ বয়সের জাভেদ ইকবাল বলেন, আমি এই এলাকায় স্কুলে গিয়েছি, বেড়ে উঠেছি, এটা বলতে পারি রাস্তা যান চলাচলের জন্য বন্ধ হলে ডিজ্যাবল মানুষের চলাচল এবং দল বেধে যারা ট্যাক্সিতে কারি খাওয়ার জন্য ব্রিকলেনে আসেন তাদের আসা বন্ধ হবে। সামনে ক্রিসমাস আর এর জন্য রেষ্টুরেন্টগুলো সাফার করবে। জাভেদ মনে করেন রাস্তা বন্ধ একটি ফায়ার হাজার্ডও বটে।
সাম্প্রতিক এক শনিবার সন্ধায় ব্রিকলেনে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে রেষ্টুরেন্টগুলো বাইরে চেয়ার টেবিল পেতে ব্যবসা করছে। মসজিদের সামনে থেকে নিয়ে ট্রুম্যান ব্রুয়ারী পর্যন্ত প্রত্যেকটি রেষ্টুরেন্টের বাইরেই চেয়ার পাতা ছিল এবং কাস্টমারে পরিপূর্ণ। শনিবার আবহাওয়াও ছিল খুবই ভাল।
ব্রিকলেনে ভিন্ন ভিন্ন খাবারের চারটি রেষ্টুরেন্টের মালিক ও বাংলা টাউন রেষ্টুরেন্ট এসোসিয়েশনের চেয়ার গুলজার খান এর ভিন্ন মত রয়েছে ব্রিকলেনে গাড়ি চলাচল খোলা রাখার ব্যাপারে। তিনি মনে করেন, বন্ধ রাখা ব্রিকলেনের ব্যবসার জন্য ভাল। তারা ইতোমধ্যেই কিছুটা পরিবর্তন উপলব্দি করতে পেরেছেন। তিনি মনে করেন কাউন্সিল রাস্তা বন্ধ করে মানুষ আনার জন্য চেষ্টা করছে, বাইরে সিটিং এর ব্যবস্থা করে সহযোগিতা করছে। ব্রিকলেনে এক সময় ৬০টির বেশি রেষ্টুরেন্ট ছিল এখন হাতে গোনা প্রায় ডজন খানেক রয়েছে। ব্যবসায় এই দুর্দশার কারণ কি জানতে চাইলে গুলজার খান বলেন, সময়ের পরিবর্তন হচ্ছে, আগের জেনারেশনের মতো আর নতুন শেফ নেই এবং রিসেশনের কারণে ব্যবসাগুলোর এই অবস্থা। সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে ব্রিকলেনে সিটির মতো রেন্ট পরিশোধ করতে হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা অনেকেই যুগোপোযোগী হচ্ছেননা এই জন্যে ইন্ডিয়ান রেষ্টুরেন্ট কমে যাচ্ছে এমন মন্তব্যের প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, কেউ রেষ্টুরেন্ট খোলে বন্ধ করতে চায়না এবং ৭০ হাজার পাউন্ড রেন্ট দিতেও চায়না।
বাংলা টাউনে নতুন ব্যবসায়ী, শেফ আতিকুর রহমান বাঙালি খাবারের রেষ্টুরেন্ট গ্রাম বাংলা পরিচালনা করেন। আতিকুর রহমানও মনে করেন রাস্তা বন্ধ থাকলে মানুষ চলাচল করবে বেশি এবং রেষ্টুরেন্টগুলো লাভবান হতে পারে। চেলসির বাসিন্দা আতিক বলেন, চেলসি, পিকাডিলি ইত্যাদিসহ লন্ডনের আরও অনেক এলাকায়ই রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ আছে। তারাওতো ব্যবসা করছেন। ব্রিকলেনেও টুরিষ্ট আসেন, এটা সুফল নিয়ে আসতে পারে। আতিক বলেন, তিনি স্থানীয় কনসালটেশন মিটিংয়েও উপস্থিত ছিলেন। ভিনদেশিদের কাছে বাংলা খাবারের স্বাদ পৌছে দিতে চান আতিক। তাই ব্রিকলেনে মানুষের পদচারণা বাড়লে সবার জন্যই ভাল হবে। তিনি আমাদের ব্যবসায়ীদের মধ্যে ভেদাভেদ ভুলে ঐকবদ্ধভাবে আলোচনার মাধ্যমে ব্রিকলেনের উন্নয়নে সিদ্ধান্ত নেয়ার আহবান জানান । ব্রিকলেনকে প্রমোট করার ব্যাপারে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের ভুমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

কাউন্সিলের বক্তব্য
কারি লাইফ এর পক্ষ থেকে ব্রিকলেন নিয়ে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলকে কয়েকটি প্রশ্ন করা হয়েছিল। তারা কনসালটেশন পরিচালনা করেছে কিনা, কতজন অংশ নিয়েছেন এবং কি রকম সাড়া পেয়েছেন, বন্ধের পরিকল্পনা কি স্থায়ী, বাংলা টাউনকে প্রমোট ও উন্নয়ন করতে তাদের কি পরিকল্পনা ইত্যাদি। মেয়র মানুষের সাথে কথা বলবেন কি না ইত্যাদি প্রশ্নের সবগুলোর কোন স্পষ্ট জবাব পাওয়া যায়নি, পাওয়া যায়নি যে পরিসংখ্যান জানতে চাওয়া হয়েছিল এর জবাব।। তবে তাদের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, কাউন্সিলের ‘‘লিভেবল ষ্ট্রীট’’ অর্থাৎ বসবাসযোগ্য রাস্তা কর্মসূচীর আওতায় রাস্তার যানসমুহ কোন দিকে যাওয়া, প্রবেশ পথ এবং ল্আেউট পরিবর্তনের ব্যাপারে তারা গত কয়েকমাস যাবত বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে আসছিলেন। তারা এনগেজমেন্ট অনুষ্ঠান, কো ডিজাইন ওয়ার্কশপ এবং রেষ্টুরেন্ট প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা করেছেন। এই অস্থায়ী বন্ধের সিদ্ধান্ত সোশ্যাল ডিস্টেন্স অর্থাৎ সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখা ও এই রেষ্টুরেন্টগুলোতে কাস্টমারদের বাইরে বসে খাবার ব্যবস্থা করার জন্যে করা হয়েছে। ব্রিকলেনে বাইরে চেয়ার টেবিল বসানোর জন্য ১৬টি ব্যবসাকে পারমিট দেয়া হয়েছে এখন পর্যন্ত। এই ল্ােউট পরিবর্তনের তহবিল দিয়েছে ডিপার্টমেন্ট অব ট্রান্সপোর্ট। লন্ডনের আরও বিভিন্ন এলাকায় এরকম অর্থায়নের মাধ্যমে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এই অস্থায়ী বন্ধের ঘটনা থেকে তথ্য সংগ্রহ করে সকল জনসাধারণের সাথে আরও কনসালটেশনের পরে স্থায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। তারা আগামীতে বাসিন্দা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং ভিজিটরদের মত্ামতও গ্রহণ করবেন বলে মুখপাত্র জানান।
কাউন্সিলের মুখপাত্র কারি লাইফের প্রশ্নের উত্তরে জানান, তারা পান্ডেমিক এর প্রভাব কাটাতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও মার্কেট ট্রেডারদের অনুদান ও রেইট রিলিফ ইত্যাদি দিয়ে সহায়তা করেছেন। বাসিন্দা এবং ভিজিটররা যাতে নিরাপদে চলতে পারেন সেই পরিবেশ তৈরি করতে ব্রিকলেনে উন্নতমানের লাইটিং, গাছ গাছালি লাগানো ও সাইনেজ ইত্যাদির উন্নয়নে বিনিয়োগের পরিকল্পনা নিয়েছেন। যেকোন পরিকল্পনাই এলাকার ইতিহাস ঐতিহ্যকে বজায় রেখে করা হবে এবং বাসিন্দাদের মতামত নেবেন। কাউন্সিল এজন্যে বারা, ব্রিকলেন ও বাংলাটাউনে উন্নয়নে ক্যাম্পেইনের জন্য একটি এজেন্সিকে নিয়োগ দিয়েছে। কাউন্সিলের মুখপাত্র আরও জানান, কাউন্সিল অফিসারগণ এবং ওয়ার্ড কাউন্সিলারগণ ব্যবসায়ীদের মতামত জানার জন্য নিয়মিত তাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করছেন। মেয়রও নিয়মিত ব্রিকলেনের ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলছেন বলে কারি লাইফকে জানান।

রানীমেড ট্রাস্টের গবেষণা
কভিড-১৯ ব্রিকলেনের কফিনে শেষ পেরেক
ব্রিকলেনে ট্রাফিক অর্থাৎ গাড়ি চলাচল বন্ধের পূর্বে গত জুলাই মাসে চ্যারিটি সংস্থা রাণীমেড ট্রাষ্ট এক গবেষণা রিপোর্টে কারি ক্যাপিট্যাল ব্রিকলেনের দুর্দশার কথা উল্লেখ করেছে। এই মহামারী ব্রিকলেনের সামনে বিশাল চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে এবং এটিই হতে ব্রিকলেনের কফিনে শেষ পেরেক। ‘বিয়োন্ড বাংলা টাউন’ শীর্ষক এই গবেষণা রিপোর্টে ব্রিকলেনের রেষ্টুরেন্ট ব্যবসার অবনতি, এর প্রভাব, অর্থনীতি এবং ভবিষ্যত ইত্যাদি নিয়ে অনেক কিছু তুলে ধরা হয়েছে। একজন রেষ্টুরেটার্স এটাকে ভুতের শহর বলে উল্লেখ করেছেন। ব্রিকলেনের রেষ্টুরেন্ট ও রিটেইল সেক্টরকে নিয়ে দুই বছরব্যাপি এই গবেষণা প্রকল্প পরিচালনা করা হয়।
এতে বলা হয় বিভিন্ন বিলাসি প্রকল্পে এবং রিজেনারেশনে রেষ্টুরেন্টগুলোকে অবজ্ঞা করার কারণে ব্রিকলেনের এই দুরবস্থা হয়েছে। এছাড়া রেন্ট ও বিজনেস রেইট বৃদ্ধি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে অব্যহতভাবে সহায়তা প্রদান এবং ট্রেনিং ইত্যাদির ঘাটতি, লোকাল অথরিটির লাইসেন্সিং কড়াকড়ির কারণে রাতে মানুষের আনাগোনা কমে যাওয়া, শোরডিচ এলাকার সাথে প্রতিযোগিতা, ভিসা রেষ্ট্রিকশনের কারণে উপমহাদেশ থেকে শেফ আসা বন্ধ এবং নতুন প্রজন্মের বাংলাদেশিদের রেষ্টুরেন্টে কাজে আসতে অনীহা ইত্যাদির কারণেই এই দুরবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
এই পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার জন্য সরকারের আর্থিক সহায়তার আহবান জানানো হয়েছে। এতে কয়েকটি সুপারিশও করা হয়েছে। ব্রিকলেন ও বাংলা টাউনের রেষ্টুরেন্টগুলোর অনন্য সামাজিক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে স্বীকৃতি দিয়ে লন্ডন প্ল্যানে অন্তর্ভূক্ত করে যথাযথ বিনিয়োগ ও ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করতে হবে। রাতের বেলা ব্যবসা বাণিজ্যকে সচল করতে বিল্ডিংয়ের প্লানিংয়ে ও লাইসেন্সিং সময় আরো শিথিল করা এবং রেন্ট ক্যাপিং এর সুপারিশ করা হয়েছে। ব্রিকলেনের ইতিহাস ঐতিহ্যে বাংলাদেশি কমিউনিটির অবদানের স্বীকৃতি এবং এর প্রতিফলন প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ও শিক্ষা বিষয়েও রাখতে হবে।
গবেষণা রিপোর্টে দেখা গেছে ১৫ বছর আগে বাংলা টাউনে যেখানে ৬০টির বেশি কারি রেষ্টুরেন্ট ছিল এখন তা ২৩টির বেশি নয়। ৬২ শতাংশের বেশি রেষ্টুরেন্ট বন্ধ হয়ে গেছে।

রাজনীতির পিং পং খেলার শিকার ব্রিক লেন
ব্রিকলেনকে শুধুমাত্র পথচারীদের জন্য খোলা রাখার পরিকল্পনা অতীতেও কয়েকবার হাতে নেয়া হয়েছে। ব্যবসায়ী ও বাসিন্দাদের মধ্যে দ্বিধা বিভক্তি, স্থানীয় রাজনীতি ইত্যাদির কারণে তা সফল হয়নি। গত তিন দশকে ব্রিক লেন ও বাংলা টাউনের (নামের সাথে সামঞ্জস্য রেখে) উন্নয়ন পরিকল্পনা অনেক বারই রাজনৈতিক পিং পং খেলার শিকার হয়েছে। এই সময় কালে কয়েকবার বাসিন্দারা রাস্তা খুড়া খুড়ি থেকে নিয়ে রাস্তায় পীচ তুলে ইট বসানো পর্যন্ত দেখেছেন। এবার রাস্তায় বিনা কনসালটেশনে (ব্যবসায়ীদের অভিযোগ) তড়িঘড়ি করে মাঠি ও প্ল্যান্ট সম্বলিত বিশাল কাঠের বাক্স বসিয়ে বন্ধ করায় স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সমালোচনা আরও বেশি করে হচ্ছে। বন্ধ হয়ে গেছে ব্রিকলেন কেন্দ্রিক অনুষ্ঠানগুলো। বৈশাখি মেলা ব্রিকলেন থেকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া, ব্রিকলেন ফেস্টিভ্যাল, বাংলা টাউন কারি ফেস্টিভ্যাল ইত্যাদির কারণে ব্রিকলেনকে ভুতের শহর বলা অযৌক্তিত নয় বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। ব্রিক লেন ও বাংলা টাউন প্রমোট করার জন্য বড় ধরণের কোন উদ্যোগ নেই বলে স্থানীয় ভাবে অভিযোগ রয়েছে। প্রশ্ন রাখা হয়েছিল বাংলা টাউনের প্রবেশ পথে যে বিশাল গেইট এটা অতীতে কবে রং দিয়ে সুন্দর করে সাজানো হয়েছে, কাউন্সিল এই প্রশ্নের জবাব দেয়নি। ব্রিকলেনকে প্রমোট করার জন্য অতীতে লন্ডন মেয়র কেন লিভিংস্টোন অনেক বারই বাংলা টাউনে এসেছেন। বাংলা টাউন কারি ফেস্টিভ্যালকে প্রমোট করার জন্য বাংলাদেশ থেকে সিলেব্রিটি শেফ এনে উৎসব করা হয়েছে। বর্তমান মেয়র সাদিক খানের কমিউনিটি এনগেইজমেন্ট নিয়ে প্রশ্ন আছে, ব্রিকলেনের প্রমোশনের কথা আর উল্লেখের প্রয়োজন নেই।

Share it in social media


আরও খবর